কবিতা- মাঞ্জা সুতো

মাঞ্জা সুতো
– সুমিত মোদক

সুতোয় মাঞ্জা দিচ্ছি;
ঘুড়ির সুতোতে …
ঠিক সেই ছেলেবেলার মতো;

আমাদের গ্রামে তখন হ্যারিকিনের আলো;
সেই হ্যারিকিনের ভাঙা কাঁচ নিয়ে
শিলে ভেঙে, গুঁড়ো করে
একেবারে ধুলো;
কাঁচের ধুলো …
কতবার যে কাঁচ গুঁড়ো করতে গিয়ে
হাত কেটেছে তার ইয়ত্তা নেই ;
তার জন্য বাড়িতে যে কত বকুনি খেতে হয়েছে
তারও ঠিক নেই …

কাঁচ গুঁড়ো আঠার সঙ্গে মিশিয়ে মাঞ্জা,
প্রাথমিক প্রস্তুতি;
তারপর এক সুপারি গাছ থেকে
দূরের আরেক গাছে সুতো টান দিয়ে
মাঞ্জা লাগানো;
রোদে শুকিয়ে সুতোর মাঞ্জা তখন কড়কড়ে;

এ কেবল আমার গল্প নয়;
আমাদের গল্প,
পাড়া-গাঁয়ের প্রতিটি ছেলের গল্প;
স্কুল ফিরে ফাঁকা মাঠে ঘুঁড়ি ওড়ানোর আনন্দ;
ঘুড়ি উড়তে উড়তে উড়তে উড়তে কখন যে
চোখের বাইরে চলে যায়;
কখন যে ছুঁয়ে আসে মেঘ;
রূপকথার এক রাজ্য;
সেখানে পৌঁছে যেতাম;
আমিও …

আর যখন এ পাড়ার মাঠ থেকে ও পাড়ার
মাঠের ঘুড়ি সঙ্গে
আকাশে শুরু করে দিতো কাটাকুটি খেলা;
সারাটা মাঠ জুড়ে সে কি উত্তেজনা;
অন্যের ঘুড়ি ভোঁ-কাট্টা করে দেওয়ার
সে কি আনন্দ;
সে যেন এক বিজয় উৎসব;

সেই ছেলেবেলা থেকে আজও;
ভোঁ-কাট্টা করার লড়াই;
অন্যের উড়ন্ত স্বপ্নগুলোকে করে দিতে পারে
ভোঁ-কাট্টা;
অন্যের ঘুড়ি, সুতো লুটে নিতে পারলে যে আনন্দ;
আনন্দ আর আনন্দ …
তার জন্য সুতোতে মাঞ্জা দিতে হয় হোক;
হাত যত রক্তাক্ত হয় হোক;
তবু মাঞ্জা দেওয়া …
কিন্তু, আমরা কোনোদিন ভাবিনা আমাদের
উড়ন্ত ঘুড়ির কথা;
যে ঘুড়ি অন্য কেউ ভোঁ-কাট্টা করে দিতে পারে;
লুটে নিতে পারে আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন;
আমরা ভাবি না …

আজও আমরা সুতো মাঞ্জা দিচ্ছি;
ঘুড়ির সুতোতে …
ঠিক সেই ছেলেবেলার মতো।

Loading

2 thoughts on “কবিতা- মাঞ্জা সুতো

Leave A Comment